আপনি যে স্মার্টফোনটি হাতে ধরে আছেন—জানেন কি, সেটি তৈরি করার আগেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল কিভাবে আপনাকে ঠকানো হবে? প্রতিবেদনে জানবেন সেই অন্ধকার ইন্ডাস্ট্রির পর্দার পেছনের সব আসল সত্য—যা ব্র্যান্ডগুলো চাইলেও আপনাকে জানাতে চায় না। আপনার ফোন কেনার সিদ্ধান্ত বদলে যেতে পারে।
আমরা এমন একটি সত্যের মুখোমুখি হব, যেটা বহুদিন ধরেই স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখছে। আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে যেসব ফোন কিনি, তার ভেতরে আসলে কতটা কাজের ফিচার থাকে, আর কতটাই বা শুধু মার্কেটিংয়ের ধোঁকা।
দীর্ঘস্থায়ীত্বের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
আজকাল প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ড দাবি করছে পাঁচ বছরের ফ্লুয়েন্সি প্রোটেকশন, ব্যাটারি হেলথ এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। কিন্তু তারা কখনোই স্পষ্ট করে বলে না এই পাঁচ বছরে ফোনে কয়টি সফটওয়্যার আপডেট দেওয়া হবে। আপডেট না থাকলে নতুন অ্যাপ, নতুন সিস্টেম আর নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সেই ফোন কিভাবে টিকে থাকবে? এই প্রতিশ্রুতিগুলো আসলে চমৎকার শোনালেও বাস্তবে নিছক মার্কেটিং।
র্যামের লুকানো খেলা
ভার্চুয়াল র্যামের মিথ এখন বাজার কাঁপাচ্ছে। ৬ জিবির ফোনকে বলা হচ্ছে ১৮ জিবি! কিন্তু ভার্চুয়াল র্যাম কখনোই আসল র্যামের মতো কাজ করতে পারে না। এটি কেবল কিছু অ্যাপকে সাময়িকভাবে ধরে রাখে। তবুও গ্রাহক ভাবেন তিনি বেশি র্যাম পাচ্ছেন। আরও বড় সমস্যা—রিভিউয়ারদের হাতে দেওয়া হয় শুধু সেরা ভ্যারিয়েন্ট। ফলে সাধারণ ক্রেতা কিনে ঠকে যায় কম র্যামের মডেলে।
সংখ্যার খেলা
পিক ব্রাইটনেস ৮০০০ নিটস, ২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, 144Hz রিফ্রেশ রেট—এসব শুনলে মনে হয় ফোনটি মহাকাশযান! কিন্তু এই বিশাল সংখ্যাগুলোর ৯০ শতাংশই ব্যবহারকারীরা বাস্তবে ব্যবহার করতে পারে না। এগুলো কেবল বক্সে লেখা থাকে, বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়। আসল অভিজ্ঞতা তার কাছেও যায় না। তাই এই নাম্বার গেম মূলত মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার কৌশল।
নাম্বার গেম
ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বা ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট যতই বাড়ানো হোক, ব্যবহারকারীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন। ২০০ মেগাপিক্সেলের বদলে ভালো অপটিমাইজড ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা অনেক উন্নত মানের ছবি দিতে পারে। কিন্তু ব্র্যান্ড জানে, বড় সংখ্যা দেখলেই গ্রাহক আকর্ষিত হয়। তাই তারা সহজ যেটা—সেটাই বেছে নেয়: সংখ্যায় প্রতারণা।
পরিবেশ রক্ষার নামে ব্যবসা
চার্জার বাদ! ইয়ারফোন বাদ! ব্র্যান্ড বলে পরিবেশ রক্ষার জন্য—শুনতে দারুণ noble কথা। কিন্তু বাস্তবে এর ফলে বক্স ছোট হয়, শিপিং খরচ কমে যায়, আর গ্রাহক বাধ্য হয়ে আলাদা টাকা দিয়ে চার্জার কিনে। ব্র্যান্ড দ্বিগুণ মুনাফা করে। পরিবেশের নামে এই আর্থিক সঞ্চয় আসলে মুনাফার খেলা। সত্যিকারের পরিবেশবাদী হলে তারা নতুন চার্জার বানানোই বন্ধ করত।
অপ্রয়োজনীয় ফিচারের খরচ
বাজেট ফোনে আইপি রেটিং বা মিলিটারি স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োজন নেই, কারণ অধিকাংশ ব্যবহারকারী কখনোই ফোন পানির নিচে ব্যবহার করেন না। তবুও ব্র্যান্ড এসব যোগ করে ফোনের দাম বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে, ফ্ল্যাগশিপ লুক দিতে বিশাল ফাঁকা ক্যামেরা মডিউল যোগ করা হয়, যেখানে আসল ক্যামেরা থাকে মাত্র একটি। এসব অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের খরচ শেষমেশ গ্রাহকের পকেট থেকে যায়।
অতি চার্জিং ও মার্কেটিং
২৪০ ওয়াট, ২৬০ ওয়াট চার্জিং—শুনলেই সবাই অবাক হয়ে যায়। কিন্তু দ্রুত চার্জিং ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে ফেলে। উচ্চ তাপমাত্রা ব্যাটারিকে দ্রুত নষ্ট করে দেয়। পাশাপাশি ব্র্যান্ডগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন হাইপ তৈরি করে যে ফোনটি পৃথিবীর সেরা, কিন্তু হাতে পেলে দেখা যায় মাঝারি মানের একটি ডিভাইস। প্রত্যাশা ও বাস্তবতার এই ব্যবধান গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
কেনার পর বিপদ
গ্রে মার্কেটে পাওয়া সস্তা দামের ফোনগুলোর বেশিরভাগই রিফারবিশড, পুরোনো স্টক বা সীমিত দেশে কাজ করা মডেল। এদের সফটওয়্যার আপডেট পায় না, ব্যাটারি দুর্বল থাকে, নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় ফোনে নকল পার্ট বসানো হয়, যা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই কম দামে উচ্চ স্পেক ফোন দেখলে সতর্ক না হলে বড় ক্ষতির শিকার হতে পারেন।
আজ আমরা স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির এমন সব কৌশল জানলাম, যা সাধারণ ক্রেতার জানা অত্যন্ত জরুরি। র্যাম, ক্যামেরা, ব্রাইটনেস, চার্জিং—সব ক্ষেত্রেই ব্র্যান্ডগুলো সংখ্যার খেলায় বিভ্রান্তি তৈরি করে। আমাদের উচিত বাস্তব প্রয়োজন বোঝা, মার্কেটিংকে নয়। ফোন কেনার আগে রিভিউ দেখা, নিজের ব্যবহার বিবেচনা করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—অপ্রয়োজনীয় ফিচারে অর্থ নষ্ট না করা। সচেতন হোন, কারণ সচেতন গ্রাহককে প্রতারণা করা কঠিন। -তথ্যসূত্র: SamZone
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখুন - এখানে ক্লিক করুন
