নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার দাবি তুলে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোকে স্যাটেলাইট লোকেশন ট্র্যাকিং—বা এ-জিপিএস—সব সময় সক্রিয় রাখতে বাধ্য করার একটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ভারত সরকার। কিন্তু ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, গুগল, স্যামসাংসহ সবাই এর তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।
বিভিন্ন নথি, ই-মেল ও পাঁচটি সূত্রের তথ্য দিয়ে রয়টার্স জানায়—এই প্রস্তাব কার্যকর হলে স্মার্টফোনে লোকেশন সার্ভিস সব সময় অন থাকবে। ব্যবহারকারী চাইলে এটিকে বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় করতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত নির্দিষ্ট অ্যাপ চালু থাকলে বা জরুরি কলের সময় সক্রিয় হওয়া এ-জিপিএস প্রযুক্তি কর্তৃপক্ষকে এমন নিখুঁত লোকেশন তথ্য দিতে সক্ষম, যা দিয়ে একজনকে প্রায় পুরোপুরি ট্র্যাক করা সম্ভব।
ব্রিটেনের ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ জুনাদে আলী বলেন, “এই প্রস্তাব কার্যকর হলে স্মার্টফোনগুলো একেকটি পূর্ণাঙ্গ নজরদারি ডিভাইসে পরিণত হবে।”
এর আগেও মোদি সরকার সব ডিভাইসে রাষ্ট্র পরিচালিত একটি সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-লোড করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু গোপনীয়তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে সেটি বাতিল করতে হয়। এবার আবারও নতুন নজরদারি-সংক্রান্ত প্রস্তাব সামনে এসেছে।
বর্তমানে তদন্তের প্রয়োজন হলে টেলিকম কোম্পানি ব্যবহারকারীর সঠিক লোকেশন দিতে পারে না। তারা কেবল সেলুলার টাওয়ার ডেটা ব্যবহার করে, যা কেবল একটি আনুমানিক এলাকার ইঙ্গিত দেয়। এ কারণে প্রকৃত অবস্থান কয়েক মিটার পর্যন্ত এদিক-ওদিক দেখাতে পারে। কিন্তু এ-জিপিএস প্রযুক্তি মাত্র এক মিটারের মধ্যেই সঠিক অবস্থান শনাক্ত করতে পারে।
রিলায়েন্স জিও এবং ভারতী এয়ারটেলসহ অপারেটরদের প্রতিনিধিত্বকারী সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) বলেছে—সরকার যদি স্মার্টফোন প্রস্তুতকারকদের এ-জিপিএস বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশ দেয়, তবে তারা সঠিক লোকেশন দিতে পারবে।
অন্যদিকে, অ্যাপল ও গুগলের প্রতিনিধিত্বকারী লবিং গ্রুপ আইসিইএ সরকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছে, এ ধরনের বাধ্যতামূলক লোকেশন ট্র্যাকিং বিশ্বের কোথাও নেই। আইসিইএ বলেছে, এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা গবেষক কুপার কুইন্টিন এই প্রস্তাবকে “ভয়ঙ্কর” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এখনও কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে অ্যাপল, স্যামসাং ও গুগল প্রস্তাবটির বাধ্যতামূলক প্রয়োগে আপত্তি জানিয়েছে। আইসিইএ বলছে—ব্যবহারকারীদের মধ্যে সেনা সদস্য, বিচারক, করপোরেট নির্বাহী ও সাংবাদিকের মতো সংবেদনশীল পেশার মানুষও রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।
টেলিকম অপারেটররা দাবি করছে, পুরোনো ট্র্যাকিং ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ছে, কারণ ব্যবহারকারীরা ফোনে পপ-আপ দেখে বুঝে ফেলেন তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে। তাই তারা চায়—সরকার প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিক যেন এই সতর্কতা পপ-আপ বন্ধ করা হয়। তবে আইসিইএ বলেছে—স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ন রাখতে এসব পপ-আপ থাকা জরুরি।
